Friday, March 16, 2012

কসমস পাঠ: কেপলার পর্ব

যুগে যুগে গল্প কবিতা লিখতে গিয়ে বিপদে পড়েছে অনেকেই। কিন্তু সে তো মেইন স্ট্রিম সাহিত্য। সাইন্স ফিকশন লিখতে গিয়ে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে এমন কারো নাম কি বলতে পারেন? উত্তরটা শুনলে অবাক হতে হয়, এই কল্পবিজ্ঞান লেখকের নাম জোহানেস কেপলার! হ্যা, ইনিই সেই মহান কেপলার যে সর্বপ্রথম গ্রহ গুলোর পরাবৃত্তাকার কক্ষপথ আর সে সংক্রান্ত তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন। বস্তুত, কেপলারের সূত্র থেকেই পরে নিউটন তার অভিকর্ষের বিপরীত বর্গীয় সূত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। তবে কেপলারের অবদান ছিলো অন্যখানে। কেপলারের আগে গ্রহ নক্ষত্র এসব নিয়ে মানুষের ধারণা ছিলো ভাসা ভাসা। ভাবা হতো অলৌকিক দেবদেবীদের কারবার এসব। তবে এদের আচরণের ছন্দগুলো ধরতে পেরেছিলো মানুষ। কিন্তু সেই ছন্দের মূলসূত্র কারো জানা ছিলো না। এমনকি এ ধরনের কোনো মূলসূত্র আছে কি না সেটাই জানতো না কেউ। সবাই ভাবতো গ্রহ নক্ষত্রের গতি দেবদেবীদের ইচ্ছা মাফিক চলে। কেপলারই প্রথম দেখাতে সক্ষম হন, সব গ্রহ নক্ষত্রের গতিকেই একসূত্রে গেথে ফেলা সম্ভব। বস্তুত, তার আবিষ্কার থেকেই পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়, যে পৃথিবী ও বাকি গ্রহরা সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। তার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারই তো ধর্মগুরুদের চক্ষুশূল হবার কথা। তাহলে কল্পবিজ্ঞানের জন্য তিনি বিপদে পড়লেন কীভাবে?
যাই হোক, এ বিষয়ে ডিটেইলে লেখাটা পরে গুছিয়ে তৈরি করা যাবে। আপাতত ইন্টারেস্টীং যে ব্যাপারগুলো জানলাম কেপলার সম্পর্কে সেগুলোর তালিকা করি,
কেপলার ধরতে পেরেছিলো, মহাবিশ্বের মূল নিয়মগুলো কোনো দৈব চরিত্রের, খেয়াল খুশিতে হয় না। গণিতের সার্বিকতা সম্পর্কেও তার ধারণাটা অমূল্য। আমরা তাকে তাই বলতে শুনি,
‘Geometry existed before the Creation. It is co-eternal with the mind of God… Geometry provided God with a model for the Creation… Geometry is God Himself’ (COSMOS, pg 70)
বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করার পরে, কেপলার অস্ট্রিয়ার গ্রাজ নামক স্থানে, এক সেকেন্ডারি স্কুলের গণিত শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি শুধু যে একজন মহান চিন্তাবিদ ছিলেন তা-ই না, তার লেখনীও ছিলো ঝরঝরে। কিন্তু ক্লাসরুমে শিক্ষক হিসাবে তার অবস্থা ছিলো শোচনীয়। কথা বলতে গিয়ে অ্যা, ওঁ... করতেন। বেশিরভাগ সময়ই কী বলছেন তা আর বোঝা যেতো না। প্রথম বছরে তাও গুটিকয় ছাত্র ছিলো তার। পরের বছর থেকে, তার ক্লাসে আর কোনো ছাত্রই আসতো না।
বোঝাই যাচ্ছে, যে তার আয়-ইনকামের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। ওদিকে তার স্ত্রীও ছিলো একেবারেই সাধারণ মহিলা। কেপলারের গাণিতিক প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না তার পক্ষে। রীতিমত অশান্তির সংসার। স্কুলের গণিত শিক্ষক, যার কাছে আবার কেউ পড়তেই আসে না, তেমন কারো স্ত্রী কী বুঝবে তার স্বামীর চিন্তার গভীরতা? কী বুঝবে কেন কেপলার লেখে-
‘The intense pleasure I have received from this discovery can never be told in words… I shunned no calculation no matter how difficult. Days and nights I spent in mathematical labors, until I could see where my hypothesis would agree with the orbits of Copernicus or whether my joy was to vanish to thin air’. (COSMOS, pg 72)
কিন্তু যত ভাবেই তিনি চেষ্টা করুন না কেন, তার প্রাথমিক অনুমানের সাথে, গ্রহসমূহের কক্ষপথের হিসাব কোনোভাবেই মিলছিলো না। কিন্তু নিজের তত্ত্বের সৌন্দর্য্য আর বুদ্ধিদীপ্ততা (elegance) তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছিলো যে সে ভেবেছিলো নিশ্চয়ই তার হাতে যে পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত আছে, সেগুলোতেই কোনো গলদ আছে। কিন্তু সেই সময়ে, সবচেয়ে সূক্ষ পর্যেবক্ষণলব্ধ উপাত্ত ছিলো একজন স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ডেনিস গনিতবিদ টাইকো ব্রাহের কাছে। টাইকোব্রাহে তখন, রোমান সম্রাটের রাজকীয় গণিতবিদ। এবং সৌভাগ্যই বলতে হয়, কীভাবে কীভাবে যেন কেপলারের গাণিতিক প্রতিভার কথা পৌছে গেছিলো টাইকোব্রাহের পৃষ্ঠপোষক রোমান সম্রাট রৌডলফ ২ এর কাছে। এবং তার পরামর্শেই টাইকোব্রাহে কেপলারকে নিজের দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠান।
এক দূরবর্তী, প্রদেশের মামুলি স্কুল শিক্ষক হয়ে টাইকোব্রাহের মত এত নামকরা এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তির সঙ্গে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়ে কেপলার আত্মবিশ্বাস হীনতায় ভুগছিলেন। এবং যোগ দেবেন কি না তাই নিয়ে এক রকম মানসিক দোলাচালের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু ইতিহাস তার হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো। ঘটনাটা ঘটে ক্যাথলিকদের সঙ্গে প্রোটেস্টান খ্রিস্টানদের ধর্মযুদ্ধের সুচনার সময়কার ঝামেলা থেকে। কেপলারের স্কুল, যেটা ছিলো প্রোটেস্টান্টদের জন্য, বন্ধ হয়ে যায়। সেখানকার ক্যাথলিক আর্চডিউক ঘোষণা দেন, এই বেদাত প্রোটেস্টান্ট গুলোর বদলে, একটা মরূভূমিও ভালো। তাই তাদেরকে বিতাড়ন অথবা নিঃশেষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শহরের বাসিন্দাদের জড়ো করা হয় নিরীক্ষার জন্য। সবাইকে নিজেদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাসের খাটিত্বএর পরীক্ষা দিতে হয়। যারা ক্যাথলিক বাদে অন্য কোনো ধর্মের ছিলো, তাদেরকে নিজের আয়ের এক দশমাংশ জরিমানা করা হয়, এবং মৃত্যুর হুমকি দিয়ে ঐ অঞ্চল থেকে চিরতরে বিতাড়ন করা হয়। কেপলার ওদের সাথে আপোষ করার বদলে নির্বাসনকে বেছে নেন। লেখেন,
“Hypocracy I have never learned. I am in earnest about faith. I do not play with it.”
নিজের স্ত্রী আর সৎ মেয়েকে নিয়ে প্রাগ এ টাইকোব্রাহের সাথে যোগ দিতে রওনা দেন তিনি। স্ত্রীর সাথে সাংসারিক অশান্তি তখন তুঙ্গে। বকাঝকার মত অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে গেছে দুয়েকবার। এসব নিয়ে কেপলারকে বলতে শুনি,
“for my studies sometimes made me thoughtless; but I learned my lesson, I learned to have patience with her. When I saw that she took my words to heart, I would rather have bitten my own finger than to give her further offense.”
কেপলারের আশা ছিলো, টাইকোব্রাহের কাছে যাবার পরে, সে তার সংগ্রহ করা উপাত্তগুলো দেখতে পারবে। এবং গ্রহের কক্ষপথের একটা কার্যকর তত্ত্ব দাড় করাতে পারবে। কিন্তু ওখানে পৌছে তাকে আশাহত হতে হয়। নিজের এত কষ্টের ফসল এক নবীন গণিতবিদ এসে নিয়ে যাবে, এটা কোনো ভাবেই মানতে পারছিলেন না টাইকোব্রাহে। তাই কোনো তথ্য দেখাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। অবশ্য, মাঝে মধ্যে এটা ওটা জানাতেন কথার ফাকে। টাইকোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় তার স্বর্ণের নাক থেকেই। আসল নাকটা তিনি খুইয়েছিলেন ছাত্রাবস্থায়। অন্য এক ছাত্রের সাথে, কে সেরা গণিতবিদ সেই নিয়ে ডুয়েল লড়তে গিয়ে! তার আশে পাশে নানান রকম সহকারি, চাটুকার, লেজুড়বৃত্তিকারীরা ঘিরে থাকতো। কেপলার তাই লিখেছেন, ‘Tycho … is superlatively rich but knows not how to make use of it. Any single instrument of his costs more than my and my whole family’s fortunes put together.’
টাইকো কেপলারকে তার সংগ্রহে থাকা উপাত্ত না দেখানো সম্পর্কে কেপলার লিখেছেন, ‘Tycho possesses the best observations… he also has collaborators. He lacks only the architect who would put all this to use.’ (COSMOS 74)
আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মই এভাবে জড়িয়ে পড়েছিলো, এই দু জনের ব্যক্তিত্বের দ্বন্দের মাঝে। কেপলার যোগ দেওয়ার ১৮ মাস পরে, খাবারে অনিয়মের ফলে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে পড়েন টাইকো ব্রাহে। এবং এই অসুস্থতাতেই তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যু শয্যায়, টাইকো তার পর্যবেক্ষণ লব্ধ তথ্য উপাত্ত কেপলারের নামে দিয়ে যান। তারপর সে রাতে তাকে ঘোরের মধ্যে প্রবল আকুতিতে  বার-বার বলতে শোনা যায়, “Let me not seem to have lived in vain… Let me not seem to have lived in vain.” এভাবেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পর টাইকোর পরিবারের কাছ থেকে উপাত্তগুলো সংগ্রহ করতেও অনেক ঝামেলায় পড়তে হয় কেপলারকে। কারণ কোনোভাবেই তারা সহযোগীতা করছিলো না। তবে একসময় তিনি সেগুলো হাতে পান।
এরপর কেপলার দিনের পর দিন অঙ্ক কষে গেছেন। চিন্তা করে গেছেন, পৃথিবীর সাপেক্ষে মঙ্গলের আপেক্ষিক গতির যে উপাত্ত টাইকো সংগ্রহ করেছিলো একযুগেরও বেশি সময় ধরে, টেলিস্কোপ আবিষ্কারেরও আগে। সেগুলো নিয়েই দিনের পর দিন পড়ে থেকেছেন কেপলার। এই যে বহু ক্যালকুলেশন কেপলার করেছেন, সেগুলো পড়তে গিয়ে একঘেয়েমিতে ভোগা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তাই তাকে লিখতে দেখি, ‘If you are wearied by this tedious procedure, take pity on me who carried out at least seventy trials.’ (COSMOS 76)
টানা তিন বছর গাণিতিক হিসাব করার পরে কেপলার মঙ্গল গ্রহের জন্য প্রায় সঠিক একটা বৃত্তাকার কক্ষপথের সূত্র বের করে ফেলেন। যেটা টাইকোর প্রায় দশটা পর্যবেক্ষণের সাথে, দুই মিনিট কোনের মধ্যে মিলে যায়। ঊল্লেক্ষ্য, একডিগ্রির ৬০ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এক মিনিট। ব্যাপারটা বেশ সন্তোষজনক। কিন্তু কেপলারের আনন্দ কেটে যায় অতি দ্রুতই। কারণ টাইকোর আরও দুইটা পর্যবেক্ষণ কোনোভাবেই তার বৃত্তাকার কক্ষপথের সূত্রের সাথে মিলছিলো না। এবং প্রায় আট মিনিট বিচ্যুতি দেখা দিচ্ছিলো। (খেয়াল করুন, আট মিনিট কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে খুবই কম)। কিন্তু কেপলারে বৈজ্ঞানিক চেতনা ছিলো একজন সত্যিকার মহান চিন্তাবিদের মতই। এই সূক্ষ্মবিচ্যুতিকেও তিনি তাই অবহেলা করেণনি। এবং নিজের তত্ত্বকে আবারও নতুন করে গড়তে বসেছেন। এ প্রসঙ্গে তাকে লিখতে দেখি, “If I had believed that we could ignore these eight minutes, I would have patched up my hypothesis accordingly. But, since it was not permissible to ignore, those eight minutes pointed the road to a complete reformation in astronomy.”
এভাবেই এক সময় তিনি পরাবৃত্তাকার কক্ষপথের সূত্রগুলো বের করতে সক্ষম হন। কেপলারের সূত্র গুলো এতইটাই সার্বিক যে, বহু কোটি আলোক বর্ষ দূরের, কোনো নক্ষত্রের কোনো গ্রহ, বা উপগ্রহ বা ধুমকেতু... এসবের কক্ষপথই এই একই নিয়ম মেনে চলে। এই যে সর্বপ্রথম মানুষ হিসাবে কিছু জেনে যাওয়া, সে প্রসঙ্গে কেপলার লেখেন, “I am writing the book- to be read either now or by posterity, it matters not. It can wait a century for a reader, as God Himself has waited 6000 years for a witness.”
এবং এর পর বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার জন্য কেপলার একটা সাইন্স ফিকশন লেখেন। হয়তো এটাই প্রথম কোনো কল্পবিজ্ঞান গল্প। এর নাম ছিলো Somnium যার অর্থ ‘The Dream’। এখানে তিনি কল্পনা করেন চন্দ্র অভিজানের! সে গল্পে, মহাকাশচারীরা গিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে দেখে প্রিয়তম পৃথিবীকে। যেটা তখন রাতের আকাশে ধীর গতিতে আবর্তিত হচ্ছে। পাঠকের দৃষ্টিকোনকে পৃথিবী পৃষ্ঠ ছাড়িয়ে অন্য একটা মাত্রা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এগুলো লেখা। সে সময় পৃথিবী ঘুরছে, এই ধারনাটা কেউ গ্রহন করতে চাইতো না কারণ, কেউ ব্যাপারটা অনুভব করতো না। সোমনিয়াম গল্পে কেপলার তাই চেষ্টা করেন, কল্পনার মাধ্যমে পাঠককে সেই ব্যাপারটা অনুধাবনে সাহায্য করতে। এমন একজন মহান গণিতবিদ কল্পবিজ্ঞান লেখার মত একটা যন্ত্রনা কেন সহ্য করলেন? এ প্রসঙ্গে তাকে লিখতে দেখি, “As long as the multitude does not err, … I want to be on the side of the many. Therefore, I take great pains to explain to as many people as possible.”
কিন্তু এই গল্প লেখা তার কাল হয়। তিরিশ বছর ব্যাপী ধর্মযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। আর যেকোনো যুদ্ধের মত সেখানেও, সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে নারীরাই। কেপলারের পৃষ্ঠপোষক এই ধর্মযুদ্ধে নিহত হয়েছে আগেই। কেপলার তাই থাকে তার নিজের শহরে। সেখানে প্রতি বছরই গড়ে তিনজন মহিলাকে ডাইনি সন্দেহে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কেপলারের মা, ঘুমের ওষুধ আর নানান রকম পথ্য বিক্রি করতেন। একবার এলাকার প্রভাবশালী মহলের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ায়, সুযোগ বুঝে ডাইনির অপবাদ তারা দিয়ে দেয় তার উপরেও। গভীর রাতে একদল ধর্মান্ধ উন্মাদ এসে গ্রেফতার করে কেপলারের মা কে। কাপড় চোপড়ের এক বাক্সে করে নিয়ে যায় তাকে। বিচারে উদ্দেশ্যে।
কেপলারের সলোনিয়াম নামক কল্প বিজ্ঞান গল্পের নায়কের বাবা-মাও ওষুধ বিক্রি করতো। সেই গল্পের নায়কের মায়ের সাথে আত্মা প্রেতাত্মাদের যোগাযোগ ছিলো। এবং ঐ অভিযাত্রী চাঁদে যাওয়ার উপায় তাদের থেকেই পায়। কেপলার তার এই কল্পনাবিলাস নিয়ে লেখেন, “in a dream one must be  allowed the liberty of imagining occasionally that which never existed in the world of sense perception.” সেই ধর্ম যুদ্ধের কালে, সাইনফিকশন ছিলো আনকোরা এক আইডিয়া। আর এই বইকেই কেপলারের মায়ের ডাইনিত্বের প্রমাণ হিসাবে দায়ের করা হয়। চুহাত্তর বছর বয়স্ক সেই মহিলাকে এক দূর্গের অন্ধপ্রকষ্ঠে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয় শ্বাস্তি দেবার উদ্দেশ্যে।
এমন অবস্থায় একজন বিজ্ঞানীর যা করার কথা কেপলার সেভাবেই অগ্রসর হন। কী কী ঘটনাকে মানুষ ডাকিনি বিদ্যার চর্চা হিসাবে ভুল করছে। এবং যেগুলোকে ডাকিনি বিদ্ধা বলা হচ্ছে সেগুলোর যে কোনো প্রাক্টিক্যাল ইম্প্যাক্ট নেই, সেসব প্রমাণ করতে সক্ষম হন তিনি। ফলে তার মা কে রেহাই দেওয়া হয়। অবশ্য সেই সঙ্গে নির্বাসন দেওয়া হয় ঐ এলাকা থেকে। এবং ওখানকার ডিউক ডিক্রি জারি করেন, যে এ ধরনের ডাইনি অভিযোগে আর যেন কাউকে গ্রেফতার করা না হয়। কেপলারে হাত ধরে আবারও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তির জয় হয়।
কেপলার বিশ্বাস করতেন, এমন এক দিন আসবে যখন হাওয়াই জাহাজ থাকবে, যেগুলো আকাশে-মহাকাশে ঘুরে বেড়াবে। যারা বয়ে নিয়ে যাবে সেইসব অভিযাত্রীদের যারা মহাকাশের বিশালতায় ভীত নয়।
মানুষ চাঁদে গিয়েছে। মানুষ হাওয়াই জাহাজ বানিয়ে ফেলেছে। মাঝে মাঝে ভাবি, আমরা এমন একটা যুগে বাস করি, কেপলারের মত মহান মনীষীর কাছেও যা ছিলো কল্পবিজ্ঞান। এর কতটুকুই বা আমরা উপলব্ধি করি?
তার মৃত্যুর পর তার এপিটাফে লেখাছিলো স্বরোচিত দুই লাইন,
“I measured the skies, now the shadows I measure. Sky-bound was the mind, Earth-bound the body rests.”

1 comment:

  1. Palash Ranjan SanyalMarch 19, 2012 at 9:40 AM

    Great review, bhai.

    জানি না, কিভাবে দেখবেন কথাটা, কিন্তু এরপর আর কোন পর্ব লিখলে খালি একটু দয়া করে আমাকে ট্যাগ করে দিয়েন ফেসবুকে, মনে থাকে না অনেক সময়। কিন্তু সত্যি চমৎকার লাগলো।

    ReplyDelete